Tuesday 24 April 2012

কবিকে দিও না দু:খ


কবিকে দিও না দু:খ

শামসুর রাহমান



কবিকে দিও না দু:খ দিলে সে-ও জলে স্থলে হাওয়ায় হাওয়ায়
নীলিমায় গেঁথে দেবা দু:খের অক্ষর। কবি তার নি:সঙ্গতা
কাফনের মতো মুড়ে রাখে আপাদমস্তক, হাঁটে
ফুটপাতে একা,
দালানের চূড়ায় চূড়ায়, দিগন্তের অন্তরালে
কেমন বেড়ায় ভেসে, চাঁদের নিকট যায়, নক্ষত্র ছিটোয় য্ত্রতত্র
খোলামকুচির মতো। তাকে দু:খ দিও না, চৌকঠ থেকে দূরে
দিও না ফিরিয়ে।
ফেরালে নক্ষত্র, চাঁদ করবে ভীষণ হরতাল, ছায়াপথ তেজস্ক্রিয়
শপথে পড়বে ঝরে, নিমেষেই সব ফুল হবে নিরুদ্দেশ।

প্রায়শ পথের ধারে ল্যাম্পোস্টে হেলান দিয়ে খুব
প্রচ্ছন্ন দাঁড়িয়ে থাকে, কখনো বা সীমাহীন রিক্ততায়
রেস্তোঁরায় বসে
বান্ধববিহীন বিষাদের মুখোমুখি
নিজেই বিষাদ হ’য়ে। মাঝে মধ্যে চৌরাস্তা খুঁড়ে তোলে এক
গোপন ফোয়ারা পিপাসার্ত পথিকের আঁজলা ভরবে ব’লে।
আবার কখনো তার মগজের উপবনে লুকোচুরি খেলে
খুনী ও পুলিশ!

মধ্যরাতে শহরের প্রতিটি বাড়ির দরজায় কিছু ফুল
রেখে আসে নিরিবিলি কাউকে কিছু না ব’লে। কবি সম্মেলনে
রাজধানী আর মফস্বলে স্টেজে কয়েক ডজন
পঙক্তির জোৎস্নায় রৌদ্রে পুনরায় স্নান সেরে স্বকীয় গোপন ঘুলঘুলিটার
দিকে চোখ রেখে নীলিমার সঙ্গে বাণিজ্যের কথা ভাবে, ভাবে
সুদূর অনন্ত তাকে চোখ টিপে বেঘোরে ঘোরাবে কতো আর?
কবি সম্মেলনে তেজী যুবরাজ, প্রেমের নিকট বাস্তবিক
বড়ো নগ্ন, বড়ো অসহায়!

কবিকে দিওনা দু:খ, স্বপ্নের আড়ালে তাকে তীব্র
আবৃত্তি করতে দাও পাথর, পাখির বুক, গাছ,
রমণীয় চোখ,
ত্বক, হেঁটে যেতে দাও ছায়াচ্ছন্ন পথে, দাও সাঁতার কাটতে বায়ুস্তরে একা,
অথবা থাকতে দাও ভিড়ে নিজের ভেতরে। রোজ
হোক সে রূপান্তরিত বার বার। নিজস্ব জীবন রেখেছে সে
গচ্ছিত সবার কাছে নানান ধরনে অকপট।
কবিকে দিও না দু:খ, একান্ত আপন দু:খ তাঁকে
খুঁজে নিতে দাও।

0 comments:

Post a Comment